Thokbirim | logo

২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১০ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

দুই বোন ও রাক্ষস ।। গারো লোককাহিনি

প্রকাশিত : আগস্ট ০২, ২০২০, ১৯:৩০

দুই বোন ও রাক্ষস ।। গারো লোককাহিনি

থকবিরিম পাঠকদের জন্য ধারাবাহিক গারো লোককাহিনি প্রকাশ করা হচ্ছে। গারো লোককাহিনি মূল ইংরেজি থেকে বাংলা ভাষান্তর করেছেন  দেবাশীষ ইম্মানূয়েল রেমা। ২০২০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় থকবিরিম প্রকাশনী থেকে ‘গারো লোককাহিনি- ১ম খণ্ড’ নামে  বইটি প্রকাশিত হয়। বইটির  মূল লেখক দেওয়ানসিং এস রংমুথু ।

দুই বোন ও রাক্ষস

সেকালে একদা আচিকদেশে দুই বোন বাস করতো। তাদের নাম ছিলো আনোক ও রঞ্জে। একদিন উভয়ে চিংড়ি ও ছোট ছোট মাছ ধরতে নদীতে নেমে গেলো। সাথে করে নিলো তাদের চেক্কি (মাছ ধরার জন্য ত্রিভুজাকৃতির ঝুড়ি) ও খকসি (খালুই)। একসাথে খুব ছোট শামুক ধরলো। খানিকটা দূরে তারা এর থেকে বড় শামুক ধরলো। বাস্তবিক নদীর স্রোতের দিকে যতোই এগিয়ে যায়, ততোই আগের থেকে তুলনায় বড় শামুক ধরতে পারছে।

অবশেষে দুই বোন একটি হ্রদের কাছে চলে আসলো। সেখানে ছিলো দৈত্যাকৃতির এক বড় শামুক যা সবথেকে বড় রংথেক-এর মতোই বড় ছিলো (রংথেক – ধান, বাজরা বা ভূট্টা রাখার জন্য বড় ঝুড়ি)। দানবীয় শামুক আনোক ও রঞ্জের পিছু নিলে জীবন রক্ষার তাগিদে তারা ছুটে পালালো। শেষে, এক গাছে উঠে নিজেদের প্রাণ রক্ষা করলো। এক বড় ষাঁড়-হাতি এসে পড়লো। দানবীয় শামুক হাতিকে দেখতে পেয়ে এর পিছনে ছুটলো। হাতি উঠে গেলো খাড়া পাহাড়-চূড়ায়। সেখানে হাতি ও শামুকের মধ্যে উন্মত্তযুদ্ধ চললো। পরিশেষে, এক খোলা অতল গর্তে পড়ে গিয়ে প্রাণ হারালো।

আনোক ও রঞ্জে এরপর দূর গহীন জঙ্গলে হেঁটে গেলো এবং রাজ বাঘের সাথে তাদের দেখা হলো। বাঘ তাদেরকে বললো,

“যদি তোমরা বাড়ি ফেরার পথ খুঁজে না পাও, তবে গিংগ্রেক মিকদালং গিংথংরেঙের বাড়িতে যাও। বন থেকে বেরিয়ে যাবার পথ সে তোমাদের বাতলে দিবে। সে মোরগ, খাসি শুকর ও গরু কেটে তোমাদের জন্য রান্না করবে। সাবধান! সে কিন্তু এক নিষ্ঠুর রাক্ষস।”

দুই বোন অবশেষে গিংগ্রেকের বাড়িতে এসে পৌঁছালো। রাক্ষসটির ছিলো এক বড় লম্বা নাক। হস্তিদন্তের মতো শক্ত। যা দিয়ে শিকারকে ফুঁড়ে মেরে ফেলতো। সে মেয়েদেরকে উষ্ণ অভিবাদন জানালো। ভোজে নিমন্ত্রণ করলো। চমৎকার মদ দিয়ে এক বিশদ ভোজ পরিবেশন করলো। রাতে তাদেরকে এক শয়নকক্ষে নিয়ে গিয়ে এক জোড়া মনোহর বিছানা দেখালো। গায়ে দিয়ে ঘুমানোর জন্য প্রতি জনকে ছয়টি করে কম্বল দেওয়ার পর চলে গেলো।

আনোক দ্রুতই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো। রঞ্জের কাছে স্থানটি গা-ছমছমে লাগলো। সে তার দু’চোখ বন্ধ করতে পারলো না। প্রায় মাঝরাতে রাক্ষসটা কক্ষে ঢুকলো। রঞ্জে তাকে আসতে দেখে ভীত হয়ে ঘরে আর থাকতে পারলো না। গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে থাকা তার বোনকে জাগানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু, বিফল মনোরথ। তাই, রঞ্জে কম্বলগুলোর নীচে নিজের বদলে কাঠের গুঁড়ি রেখে দিলো। ঘরের বাইরে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। রাক্ষস এসে তার শক্ত ধারালো নাক দিয়ে আনোককে বিদ্ধ করে সরাসরি মেরে ফেললো। রঞ্জে যেখানে ঘুমানো ছিলো সেই স্থানেও রঞ্জে আছে অনুমানে বিদ্ধ করলো। বিদ্ধ করলে শক্ত কাঠের গুঁড়িতে তার নাক ভেঙে গেলো। এই সবকিছুতে অতিশয় হিংস্র হয়ে উঠে পলানো মেয়েটির পশ্চাদ্ধাবন করলো।

রঞ্জে দৌড়াতে থাকে। ছুটেই চললো, ছুটেই চললো। সকালবেলা মেসেমা মেসেঞ্চি সকসনচির বাড়িতে এসে পৌঁছালো। মেসেমা ছিলো ইঁদুরদের (বা, ইঁদুর জাতীয়) মাতৃতান্ত্রিক গোত্রের প্রধান। সে মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে এসে নিরাপদ এক স্থানে আড়াল করে রাখলো। অনতিবিলম্বে রক্তাক্ত নাক নিয়ে রাক্ষস সেই বাড়িতেই এসে পৌঁছায়। জানতে চাইলো কোন মেয়ে এদিক দিয়ে গেছে কিনা। মেসেমা জানালো সাতসকালে সে কাউকে এদিক দিয়ে যেতে দেখেনি। পরের দিন, মেসেমা অতিশয় আতঙ্কিত মেয়েটিকে তার নিজ গ্রামে পৌঁছে দিলো। তার এই বদান্যতার জন্য রঞ্জে মেসেমাকে ছয়ঝুড়ি ধান ও ছয় ঝুড়ি বাজরা উপহার দিলো। বরাবর সেই দিন থেকে ধান ও বাজরা ইঁদুর ও কাঠবিড়ালিদের কাছে ভীষণ প্রিয় হয়ে উঠলো।

ওয়াজান মারাক রাকসাম কর্তৃক কথিত  দালবতগিরি এলাকায়, ডিস্ট্রিক্ট গারো হিলস।

কভার প্রচ্ছদ তিতাস চাকমা




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost