সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জটিল, দুঃখময় জীবন, প্রেম তার লেখনির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলেও অব্যাহতভাবে তুলে ধরেছেন সমাজে ঘটে যাওয়া নানান অসঙ্গতি, অমানবিকতা এবং আদিবাসীদের চৈতন্য ও বাস্তবতা। এসব দ্বান্দ্বিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠস্বর লেখক। অসাম্প্রদায়িকতা ও নিরপেক্ষ তার লেখার মৌলিক বৈশিষ্ট্য। শব্দের গহীনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কবি পরাগ রিছিল নির্মাণ করেছেন ‘ঊমাচরণ কর্ম্মকার’। যেখানে সরল সংক্ষোভ অন্তর্বেদনার তীব্র স্বীকারোক্তি করেছেন তিনি।
অন্তর্দর্শনের ঘেরাটোপে প্রেমের চেহারা ডানা ঝাপটানো বন্দী বিহঙ্গের নয়, মুক্ত পাখির ডানা মেলার আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে। সময়ের অপরিসীম আর্তির কণ্ঠে গেয়ে উঠেছেন লেখক জলের ঢেউয়ের মতো স্নিগ্ধ ভঙ্গিমায়, মৃদু স্বরপ্রক্ষেপণে; ওইসব কথাগুলো হয়ে ওঠে যন্ত্রণার সুলিখিত নকশিকাঁথা- ক্ষরণে খননে, সুরে ছন্দে, কখনওবা চাপা অভিমানে, ধ্বনি-কম্পনে; আর এইসবের মধ্য দিয়েও তিনি নিরন্তর খুঁজেছেন কাব্যিক সৌন্দর্য। সুখ ও যন্ত্রণাকে খুঁড়ে খুঁড়ে তুলে আনতে চায় এমন এক শোধনজল যা কিনা ফোটাবে উদ্যান। বহুরৈখিক এইসব পঙ্ক্তিমালার কেন্দ্রালোকে- যেখানে অপেক্ষা করে আছে যন্ত্রণা ও আনন্দের যৌথ অবগাহন, শিল্পসৌন্দর্যের স্নিগ্ধতম অনুভূতিমালা।
‘ঊমাচরণ কর্ম্মকার’ গ্রন্থের বেশির ভাগ কবিতায় রয়েছে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আত্মপরিচয়, তীর্যক ভাষা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও প্রেমানুভূতির অনুপম রহস্য। ঐতিহ্য প্রকাশন থেকে ফেব্র“য়ারি ২০১০ সালে প্রকাশিত চৌচোল্লিশ পৃষ্ঠাজুড়ে গ্রন্থের ছত্রিশটি কবিতায় দীঘল প্রেম, প্রতিবাদ ও মুক্তির অনুপম ছায়া পাঠককে ভাবিয়ে তোলার ক্ষমতা রাখে।

কবি পরাগ রিছিলের কবিতার বই
যাপিত জীবনে স্মৃতি আর সম্পর্কের সূতোয় বাধা মানুষের আলোকচ্ছটা হাতে নিয়ে জেগে ওঠে কবি উচ্চারণ করেন-
‘হেঁটে এসে নিজের পেশায় বসলে, জ্বালিয়ে রাখা কয়লা/ আগুনের ভাঁপ, লোহা পেটানি../শহরের কোন গলিতে বাসা, জানা হয়নি- সত্যি বলতে, সাহস করে আরেকটু জিজ্ঞেস /- বেঁচে কি আছো !’ (ঊমাচরণ কর্ম্মকার)
কাহিনি-কল্পনায় যথেষ্ট নতুন শব্দদ্যোতনা ও ভাষাশৈলিতে অন্যরকম এক আবহ সৃষ্টি করে কবিতাগুলো। উপমা ব্যবহারের ক্ষমতা তাকে পাঠকের আগ্রহের কেন্দ্রে স্থাপিত করে। খোঁজ পাওয়া যায় সমাজের বাস্তবতার চিত্র। যেন নতুনকে নতুন করে খুঁজে পাওয়ার খোরাক। শব্দের গাঁথুনিতে মনস্তত্ত্ব ও মধ্যবিত্ত জীবনের সুন্দর উপস্থাপনায় গ্রন্থটি সার্থকতা লাভ করবে। এর প্রায় কবিতায় ফুটে উঠে সেইসব চিত্র- পাখিটা উড়ে যাবার পর, হয়তো ভোলাই যেত বেদনাগুলি- / পুরনো দিনের মতো। তার উড়ে যাবার পথে যেভাবে রেখে যায় / দৃশ্যের পর দৃশ্য, সেরকম… (স্পন্দন)
স্পষ্টভাষী এবং উচ্চারণ বিন্যাসে মুখের কথার মতোই স্বাভাবিক। সর্বদাই রূপকথার জালে এঁকে ফেলেন খণ্ড খণ্ড কবিতাগুলো ; পাশাপাশি দাঁড় করাতে চান কাব্যের নিজস্ব কাঠামো। মানবতাকে তার কবিতায় অভীষ্ট করে গড়ে তোলেন নিজস্ব একটি ভুবন। শব্দশিল্পের মতো কবি নিভৃতচারী। যথেষ্ট রোমান্টিক তার ভাষা ও বাক্যশৈলী।
‘মনে হচ্ছে কাছেই তবু দূরে সরে যাচ্ছো! / অর্ধ বেদনায় অর্ধ সম্ভাবনায় করুণ চেয়ে আছি- / তোমাকে ছুঁয়ে সাদা মেঘ, কখনো বা নত / ফিরে আকুতিও বুঝতে চাচ্ছে না তার / কাছে থাকার স্বপ্নেই ঝরে গেছে কিছু নিষ্পাপ আকাক্সক্ষা / বেদনায়… বেদনায়../ বোঝো, তুমিও তো চেয়েছিলে আকাশ- (পাহাড়)।
পৃথিবীর সমস্ত আলোকচ্ছটা হাতে নিয়ে পঙক্তিগুলো জেগে ওঠে অন্ধকারের বিপরীত স্রোতে। যে স্রোতে কান্নার অধ্যায় শেষ হয়ে উদ্ভাসিত হয় নতুন দিগন্ত আর সেই আলোর পরতে পরতে কবি নির্মাণ করেন Ñ ‘
‘বাঙলি জাত্যাভিমানের তাপে হারিয়ে যায় গারো বাজার…’ পরাগের এই উচ্চারণ রূঢ় সময়ের বাস্তব চিত্র। এই সত্য অন্তর্ভেদী ও অমোঘ। তাই পরাগের কবিতা আপাদমস্তক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আত্মপরিচয়লিপি বহন করে।
‘সময় হয়েছে। কিন্তু / গোসলে ঘোর আপত্তি, তাই-/মায়ের শাসন, কয়েকটা মার, বাচ্চার কান্না ঝড়/ শরীরে পানি ঢেলে দেয়া বৃষ্টি/ গোসলের পর চুপচাপ দাঁড়িয়ে বৃষ্টি ভেজ অরণ্য’ (প্রকৃতি)
কবির কবিতা সময়ের মতো সুন্দর ও সাবলীল। তার লেখার ধরনও আকর্ষণীয়। স্বদেশ-সমকালের সৃষ্টিস্বপ্নহীন স্থবিরতার গলিত চিত্র, বিপন্নতায় ঝলসে কবিতার ভাবনাবোধ বাক্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে গভীর থেকে গভীরতর ব্যঞ্জনার সৃষ্টি করে। সর্বদাই রূপকথার জালে এঁকে ফেলেন খণ্ড খণ্ড কবিতাগুলো ; মানবতাকে তার কবিতায় অভীষ্ট করে গড়ে তোলেন নিজস্ব একটি ভুবন।
শব্দশিল্পের মতোই কবি নিভৃতচারী। তার লেখায় সরলতার মধ্যে লুকিয়ে থাকে একধরনের মুগ্ধতা। গ্রন্থের কবিতাগুলো পাঠককে মুগ্ধ করবে নিঃসন্দেহে। উৎসর্গপত্রেও সরল ভালবাসায় স্মরণ করেছেন ‘শরীরে শিশুগন্ধ মেখে হারিয়ে যাওয়া ভাই- ফ্রান্সিস পাপু রিছিল’। আশি পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটির চমৎকার প্রচ্ছদ এঁকে সৃজনশিল্পের ছাপ রেখেছেন শিবু কুমার শীল। মূল্য রাখা হয়েছে পঁয়ষট্টি টাকা।
গারো জাতি সম্পর্কে কিছু জানতে হলে এই বই অনেকটা সহায়ক ।। জেনিস আক্তার
ফুলগুলি ফুলকপির।। জেনিস আক্তার
থিওফিল নকরেকের তৃতীয় কবিতার বই ‘আমি উদ্বাস্তু হতে চাই না’
সংস্কৃতি একটি জাতির সৌন্দর্য ।। ফা. বাইওলেন চাম্বুগং
গারো ভাষায় বৃষ্টির কবিতা ।। প্রানঞ্জল. এম. সাংমা
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
-
১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ...
-
রে রে : হায়রে আমার কাঞ্জিয়া ।। নীলু রুরাম
: সমর সাংমার রেরে নিয়েই শুরু করি তবে একটু আলাদা। আমাদের...
-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপদ ব্যবহার ।। জাডিল মৃ
: এক. সময় স্রোতের সাথে আবাহমান ছুটে চলা প্রযুক্তির উন্নতি, মানব...
-
বর্তমান সময়ের তুমুল জনপ্রিয় শিল্পী দিশন অন্তু রিছিলের জন্মদিন আজ
: বর্তমান সময়ের তুমুল জনপ্রিয় শিল্পী দিশন অন্তু রিছিলের জন্মদিন আজ।...
-
বীর মুক্তিযোদ্ধা দেবতোষ যেত্রা আর নেই
: হালুয়াঘাট উপজেলার ৪নং সদর ইউনিয়নের কালিয়ানীকান্দা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা পাস্টার...
-
কেনিয়ার কৃষকরা হাতি তাড়াচ্ছে মৌমাছি দিয়ে
: কেনিয়ায় হাতির তাণ্ডব থেকে ফসল রক্ষায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে কৃষকরা।...
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত