Thokbirim | logo

২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

মিজাঙ্গি ।। গারো লোককাহিনি

প্রকাশিত : জুলাই ২৪, ২০২০, ১৭:৪৩

মিজাঙ্গি ।। গারো লোককাহিনি

থকবিরিম পাঠকদের জন্য ধারাবাহিক গারো লোককাহিনি প্রকাশ করা হচ্ছে। গারো লোককাহিনি মূল ইংরেজি থেকে বাংলা ভাষান্তর করেছেন  দেবাশীষ ইম্মানূয়েল রেমা। ২০২০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় থকবিরিম প্রকাশনী থেকে ‘গারো লোককাহিনি- ১ম খণ্ড’ নামে  বইটি প্রকাশিত হয়। বইটির  মূল লেখক দেওয়ানসিং এস রংমুথু ।

মিজাঙ্গি  

আচিকরা বিশ্বাস করে যে প্রতি জীব ও জড়বস্তুমাত্রেরই অদৃশ্য সত্ত্বা (counterpart) বা আত্মা  (astral body) রয়েছে। তারা এও বিশ্বাস করে যে চেতন জগতের সঙ্গে অচেতন জগৎ সম্পর্কযুক্ত। ফলে, জীবন্ত কিংবা প্রাণহীন কোন কিছু থেকে যখন সেই নিহিত সত্ত্বা চলে যায় বা সেই আত্মা বেরিয়ে যায় তখন দেহধারী সেই জীব বা জড়বস্তুর বর্তমান রূপের অস্তিত্ব বিনষ্ট হয় বা সম্পূর্ণ শেষ হয় (বা, প্রাণহানি ঘটে)। ফলে, সেই জীব বা জড়বস্তুতে থাকা মূল জীবাত্মার অস্তিত্বের স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যা স্বাধীন সত্ত্বা।

উদাহরণস্বরূপ, আচিকদের প্রধান খাদ্যশস্য ধানের অদৃশ্য প্রাণসত্ত্বা রয়েছে যা তার দৃশ্যমান শস্যরূপে ব্যাপ্ত। এই অদৃশ্য সত্ত্বাকেই বলা হয় মিজাঙ্গি যার কৃপাময়ী মা মিনিমা রক্কিমে নামে সুপরিচিত। পরবর্তীজনের (মিনিমা রক্কিমে) সন্তুষ্টি বিধানে ধানবীজ বপনের আগে জুম ক্ষেতে ও নিড়ানির সময়কালে ধানের কচি চারায় আচিকরা আকৃত্যা নামে যজ্ঞীয় আচার পালন করে থাকে। ফসল তোলার সময়, যে অপদেবগণের প্রধান চুয়াল-চোঙ্গাল৪ নামে পরিচিত, সেই অপদূতদের দ্বারা প্রতারণাপূর্বক ধানে নিহিত প্রাণসত্ত্বা বা মিজাঙ্গিকে রহস্যজনকভাবে গোপনে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া রোধ করতে, আচিক জুমচাষীরা শস্যদানা ধারণকারী সমস্ত শস্যদণ্ডের অগ্রভাগে সাবধানে এক কি দুইটি করে গিঁট বাঁধে।

জিংনা মারাক রাকসাম কর্তৃক কথিত রংবিংগিরি গ্রাম, ডিস্ট্রিক্ট গারো হিলস।

 

পাদটীকা:

১. মিজাঙ্গি: আক্ষরিকভাবে, ধানের জীবনীশক্তি বা প্রাণ-প্রবাহ।

২. মিনিমা রক্কিমে: আক্ষরিক অর্থে, রক্কিমে হলো ধান্য-মাতা (ধানের মাতা)। রক্কিমে সম্ভবত হিন্দুদের ধন-সম্পত্তির দেবী লক্ষ্মীর গারো নাম।

৩. আকৃত্যা/আখ্রিতা: আক্ষরিক অর্থে, ভূমির জন্য করা আনুষ্ঠানিক যজ্ঞীয় উৎসর্গ। আকৃত্যা/আখ্রিতার সময় যজ্ঞীয় গীতস্তোত্র সহকারে মোরগ, শুকর, কুকুরছানা, এবং হাঁস উৎসর্গ করা হয়। উৎসর্গটি করা হয় নতুন পুড়ানো জুমক্ষেতের বিশেষ নির্বাচিত স্থানে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত বেদীর ওপর। আকৃত্যা/আখ্রিতা করা হয় সাফ করা জুম ক্ষেতের ভগ্নাবশেষ পুড়িয়ে দেওয়ার দিনটির পরের দিন সকালে একবার এবং তারপর সাধারণত মে কি জুন মাসে নিড়ানির সময়ে। উভয় সময়েই, গীতস্তোত্র সহকারে যজ্ঞবলি উৎসর্গ করা হয় প্রথমে জুম ক্ষেতে স্থাপিত বেদীতে এবং তারপর গৃহে স্থায়ী বেদীতে।

আকৃত্যা/আখ্রিতার শেষ ধাপে গারো পাহাড়ের প্রতিটি আদিবাসী গারো বাড়িতে প্রচুর চু আনা হয় এবং উপস্থিত সকলকে অবাধে-স্বচ্ছন্দে পরিবেশন করা হয়। গ্রামের প্রবীণ পুরুষগণ দৃঢ়মুষ্টিতে মিল্লাম ও স্ফি ধারণ করে ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের সুর-ছন্দের তালে তালে স্বীয় গৌরবগাঁথা ধ্বনিত করতে করতে পূণ্যানুষ্ঠানিক নৃত্য  (ritual dance performance) করে থাকেন।

চুয়াল-চোঙ্গাল: আক্ষরিক অর্থে, আলোক-ভূষিত লম্বা জিহ্বাঅলা, অতিকায় থলেবিশিষ্ট (gargantuan-pouched) দানব। গারো প্যান্থিয়নে এক প্রকার ক্রূরমতি লুসিফার (বাইবেলে বর্ণিত দিয়াবল)। রাতের আকাশে প্রায়ই দেখা যায় এমন লম্বা নিরবচ্ছিন্ন সমুজ্জ্বল লকলকে আলোকরশ্মি চুয়াল চোঙ্গালের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি সাধারণ উল্কা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। রাতের পরিষ্কার আকাশে প্রায়ই দেখা যায় এমন উজ্জ্বল আলোকপুচ্ছকেই গারোরা চুয়াল চোঙ্গালের স্পষ্ট প্রকাশিত চিহ্নরূপে বিশ্বাস করে। যা ‘রাক্কাসি’ নামেও পরিচিত। গারো পাহাড়ে আদিবাসী গারোরা অপদেবের (monster) জন্য সাধারণত ধানের শীষ উঠলে আনুষ্ঠানিক যজ্ঞীয় কর্মাদি করে থাকে যাকে আকগালগাল্লা (Akgalgala) বা রাক্কাসি কৃত্যা (Rakasi Krita) বলা হয়।




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost