Thokbirim | logo

৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

‘জাজংনি রাসং’ গারো সাহিত্য প্রেমিদের জন্য বিলাসিতা নয় প্রয়োজনীয়তা ।। প্রণব নকরেক

প্রকাশিত : জুলাই ২০, ২০২০, ১২:১৪

‘জাজংনি রাসং’ গারো সাহিত্য প্রেমিদের জন্য বিলাসিতা নয় প্রয়োজনীয়তা ।। প্রণব নকরেক

সাহিত্য জীবনের প্রয়োজনীয়তা নাকি বিলাসিতা? প্রশ্নের উত্তর প্রত্যেকের কাছে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। আবার অনেকেই বলবে সাহিত্য ছাড়াও জীবন চলে। সুতরাং তাদের কাছে সাহিত্য বিলাসিতা। তবে ‘বিলাসিতা একসময় প্রয়োজনীয়তা হয়ে দাঁড়ায়’। সাহিত্য জীবনের জন্য প্রয়োজনীয়তা কিনা সে বিতর্কে আর যাচ্ছিনা। তবে তালগাছটা আমার বলে সাহিত্য যে জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় তার পক্ষেই আমার মত। কিন্তু মতের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করছিনা। কারণ আমার লেখার বিষয় অনেকটা কাছের হলেও সাহিত্যের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নয়। কারও সাহিত্য রচনা নিয়ে সমালোচনা বিশেষ করে গঠনমূলক আলোচনা করতে কিছুটা হলেও ভয় কাজ করে। মাঝে মাঝে অপারগতাও আসে।
তবে কবি মিঠুন রাকসামের ‘জাজংনি রাসং’ (জ্যোৎস্নার দেমাক) বইটি দেখা এবং পড়ার পর কেন জানি লিখতে ইচ্ছে হলো। গারো ভাষায় (আবেং) লেখা কাব্য কমই দেখা যায়। তাই বইটি আমাদের গারো সাহিত্য প্রেমিদের জন্য বিলাসিতা নয় প্রয়োজনীয়তা। কারণটা হয়তো কবিতার চরণেই লুকায়িত- মান্দি মিচিক জাজংগিদা নিথুয়ানা!(২০) বইটির নামকরণেই কেমন জানি মন কারে। সাহিত্যে নামকরণটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে এ কাব্যের নামকরণ যথার্থ।
কবিতায় দেখি – আগুন জাআ নিবো জাজংনি রাসংখো জাজংনি গ্রাংউদে ওয়াল চাআ ওয়াল চাআ। (৮ কবি এ কাব্যে জ্যোৎস্নাকে বিভিন্ন দিক থেকে দেখেছেন। জ্যোৎস্না কীভাবে বিভিন্নজনে বিভিন্নতা আনে তার বর্ণনাও অসাধারণ। যেমন ; বৌছি খেলতে আসা রোকেয়া ঘাই মারে বাকিদের শরীর খারাপ মুসলমান হইনি বলে হালিমা পিছলে যায় একা একা জ্যোৎস্নার দেমাক দেখি বাকিদের পরীক্ষা। (৫) এছাড়াও – অস্থির জ্যোৎস্নায় অস্থির রাতের পাখি – অস্থির প্রেমিক প্রেমিকা অস্থির জ্যোৎস্নায় ডুবে যাওয়া মানুষ। (১১) কিন্তু জ্যোৎস্নার সৌন্দর্য্য উপভোগে যেন কারও বাধা নেই। নেই কোন বৈষম্য। সেখানে সবাই সমান। কবিতায় – মান্দি রুরি গিমমিকইন খালজুরিয়া থাপসিরিরি জাজংখো নিতে নিতে চুতকা। (৪)
কবি মূলত জ্যোৎস্নার আলোকে গারো জীবনকেই কবিতায় তুলে ধরতে চেয়েছেন। গারো লোকায়ত জীবনকে জ্যোৎস্নার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে যেন দেখেছেন। কবিতায় তারই প্রতিচ্ছবি দেখি – নিথুয়া জাজং মান্দি চু গিদ্দা মুগমুগেদা মুগমুগেদা মান্দিসংখো (৩) অলংকার ব্যবহারেও তিনি নিজ অস্তিত্বের কাছে দ্বারস্থ হয়েছেন। কবিতায় উপমা ব্যবহারে দেখি – মান্দি সংনি জরাদে গিচ্ছাম তামা গিদা চিংচিবা চিদে নাম্মিন চিংচ্রেতবা (১০)
ছন্দের ক্ষেত্রে কবি ত্রিশের কবিদের মতোই বিক্ষিপ্ত। কবিতার ছন্দে যেন কবির নেই খেয়াল। মনোযোগ শুধু ভাব প্রকাশে। তবে কবিতাকে আধুনিক কবিরা যেভাবে উন্মুক্ত করেছেন ছন্দের বালাই থেকে কবিও এখানে এ ধারায় হেঁটেছেন। হাঁটারই কথা।
সমকাল যে পিছু ছাড়ে না। কিন্তু মাঝে মাঝে দেখা যায় – আচিক -আগাচা৬ /ব্রিং হানদিংচা ৪ জাজং নিউন নিউন ৮/বননা হামজা৪(১৩) আবার, রিয়াংই সিকচিমওদ্দা। ৭/রাংসা রাংগিনি ওগগামুদে৯/ চানচিয়ামুং ৪/মিমাং হা-খনবা।৫ (৯) এখানে পর্বগুলোর মধ্যে ছন্দের কোন সাজুয্য রক্ষিত হয়নি। তবে বাংলার ক্ষেত্রে কিছুটা মিল লক্ষিত হয় – মাঝে মাঝে ৪/জ্যোৎস্নাকে ৩ ফর্সা লাগে ৪/পবিত্র লাগে৫(১০) এখানে ৪ মাত্রার পূর্ণ পর্ব এবং ৩ ও ৫ মাত্রার অপূর্ণ পর্বের মধ্যে অন্ত্যমিল দেখা যায়।
কবি শব্দ ব্যবহারে হয়তো সর্বত্র ব্যবহৃত আবেং শব্দ ব্যবহার করেননি। কিন্তু আবেং তথা গারোদের ভাষারই যেখানে কোন প্রমিত রূপ নেই সেখানে এ মন্তব্য করা অমূলক হয়ে যায়। তবে শেষটা কবিতার উদ্ধৃতি দিয়েই শেষ করতে চাই- ক্ষয়ে যাওয়া শরীরের নাম ঘ্রাণ ক্ষয়ে যাওয়া বিম্বের নাম জ্যোৎস্না।(১০) চরণ দুটি-ই কবির কবিতা সম্পর্কে আমাদের মনে জ্যোৎস্নার দেমাকের মতোই হিংসের পিদিম জ্বেলে দেয়।
বইটি প্রকাশ করেছে থকবিরিম প্রকাশনী। প্রচ্ছদ করেছে নির্ঝর নৈঃশব্দ্য। বইটির মূল্য ১০০ টাকা
লেখক পরিচিতি
প্রণব নকরেক তরুণ কবি ও গল্পকার।
গারো সম্প্রদায়ের তরুণ কবি প্রণব নকরেক

তরুণ কবি প্রণব নকরেক

আরো লেখা




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost