সূর্যদেবতা মিনি চিপিনপা-সালজং না’দাংপা ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর এসব কাণ্ড দেখে হতবাক হয়ে গেলেন। আগুনে পোড়ে ঐ শুষ্ক গো-বিষ্ঠার ধুম তাঁর চোখে-মুখে লাগাতে লাগাতে। তিনি ভাবলেন তাঁর ছোট ভাই বামন রাচা-সজন গিতেল তাঁকে অপেক্ষা করতে বলে, বাড়িতে থেকে যেতে বলে তাঁর স্ত্রীকে দিয়ে তাঁকে অপমানই করেছে। এই অপমানবোধ তাঁকে ভীষণ পীড়া দিল। তাই আর এক মুহূর্তও তাঁর ছোট ভাইয়ের বাড়িতে থাকতে চাইলেন না। তিনি ভীষণ রেগে সেখান থেকে অন্যত্র চলে গেলেন।

মিসি চিপিনপা-সালজং না’দাংপা চলে গেলেন। কিন্তু চলার পথেও ভীষণ অপমানের জ্বালায় মনের ক্ষোভে সংবরণ করতে পারলেন না। তাই পথে যেতে যেতে তাঁর ছোট ভাই বামিন রাচা-সজন পিতেলকে অভিশাপ দিতে লাগলেন। তিনি তাঁর ছোট ভাইকে এই বলে অভিশাপ দিলেন- বামিন রাচা-সজন গিতেল, আমার প্রতি তুমি এ কী করেছ? জগতের প্রত্যেক মানুষ যুগে যুগে তোমার এ কাজের নিন্দা করবে। তোমাকে তারা ঘৃণা করবে। তুমি এ জীবনে অধঃপতিত হবে। তোমার বড় ভাইকে তুমি মর্যাদা দাওনি। তোমার উন্নতি ও প্রতিষ্ঠা আর হবে না। আমার প্রতি তুমি যা করেছো, তার চাইতে তুমি অপমানিত হবে, লাঞ্জিত হবে। জলের বুগা (জলের দেবতা) তোমাকে টেনে, নিবে তোমার হাঁড় মাংস খাবে। আমি তোমাকে এ অভিশাপ দিচ্ছি।
এভাবে পথ চলতে চলতে মিসি চিপিনপা-সালজং না‘দাংপা এসে পৌঁছালেন আ۰গিংসাক গারো সা۰আতাল অঞ্চলে। তারপর ঐ অঞ্চলের কাপেরা গিংগারাপা সুউনদি জেংজেংগি নামক স্থানের আয়ে মেসালি সিংসালি তৎমারি নাম্নী এক গরিব বিধবার বাড়িতে এসে উঠলেন। এ বিধবার ‘দতি বা দৎনি’ নাম্নী এক পূর্ণ যৌবনা সুন্দরী নারী যুবতী কন্যা ছিল। তাদের সংসারে কোনো পুরুষ মানুষ ছিল না। মা-ঝিয়ের সংসার। তারা খুব গরিব ছিল। তাদের দিন অতি কষ্টে চলতো। তাদের ঘর ছিল ভগ্ন-প্রায়। ঘরের চালটি ছিল শুষ্ক কলাপাতার ছানি। ঘরের বেড়া ছিল ভাঙা দাড়ির। সুতরাং এ জীর্ণ কুটীরেই ছিল তাদের বসবাস। তারা বনের ফল, ফুল, আলু ইত্যাদি খেয়ে জীবনধারণ ও জীবনযাপন করতো। এমন অসহায় গরিব পরিবারে এ নবাগত অতিথি-মিসি চিপিনপা-সালজং না’দাংপা ছিলেন সম্পূর্ণভাবে অপরিচিত ব্যক্তি। দেবতা যে এমন মানব বেশে তাদের বাড়িতে অতিথিরূপে এসেছেন, তা তারা জানতে পারেনি। আর জানার কথাও নয়। এখন এ নবাগত অপরিচিত অতিথিকে কি নিয়ে আদর আপ্যায়ন করবে। তাঁকে আদর-আপ্যায়ন করার মতো শক্তি-সামর্থ তাদের নেই। কিন্তু গরিব হলেও তাদের জীবন ছিল পবিত্র ও নিষ্কলঙ্ক। মিসি চিপিনপা-সালজং না’দাংপা তা জানতেন। তিনি তাদের প্রতি করুণাবিষ্ট হলেন এবং আয়ে মেসালি তৎমারি কিংমারিকে বললেন, ‘আজ আমি তোমাদের অতিথি হব, তোমাদের ঘরেই রাত্রি যাপন করবো।’ ঘরে যুবতী মেয়ে পুরুষবিহীন সংসার, জীর্ণকুটীর, অপরিচিত অতিথি এ কীভাবে সম্ভব? এইসব ভাবে আয়ে মেসালি সিংসালি তৎমারি কিংমারি। তারা মায়ে-ঝিয়ে পরামর্শ করে। কারণ, মনে আছে দ্বিধা-সংকোচ, লোক-লজ্জা ও লোক-নিন্দার ভয়। তাই আয়ে মেসলি সিংসালি তৎমারি কিংমারি বিনয়ের সঙ্গে মিসি চিপিংপা-সালজং না’দাংপাকে বললেন ‘আমরা গরিব মানুষ, আমরা আপনাকে কী খেতে দেবো? আমাদের বাড়ি-ঘর নেই। একটি মাত্র ঘর, তাও অর্ধভগ্ন। চালে শুষ্ক কলাপাতার ছানি, ভাঙা দারির বেড়া, দেখতে খুবই বিশ্রী। আমরা আপনাকে কোথায় থাকতে দেবো? থাকতে আপনার খুব অসুবিধে হবে, কষ্ট হবে। তাছাড়া এখানে কোনো পুরুষ মানুষ নেই। পুরুষ মানুষ থাকলে আলাপ-সালাপ করে কোনো রকমে রাত কাটিয়ে দিতে পারতেন। তাই কোনো ধনী লোকের বাড়িতে গেলেই বোধ হয় আপনার সবদিক দিয়ে সুবিধে হতো।’ মিসি চিপিনপা-না’দাংপা তাদের মনের ভাব ও চিন্তু জেনে বললেন-‘আমি আজ তোমাদের এখানেই থাকবো, কষ্ট ও অসুবিধে হলেও তোমাদের সঙ্গে রাত্রিযাপন করবো। তোমরা আজ তোমাদের ও কি পান করাবে এ নিয়ে কোনো চিন্তা করো না। আমি জানি, তুমি বিধবা, গরিব ও তোমার মেয়ে দৎসি পিতৃহীনা ও যুবতী। তোমাদের বাড়িঘর তেমন ভালো নয় ঠিকই কিন্তু মানুষ হিসেবে তোমরা খুবই ভালো। আমার জন্যে কিছু ভাবতে হবে না। আমাকে তোমাদের ভয়ের কোনো কারণও নেই। আমি ঘুমাবো না, রাতে জেগেই থাকবো। শুধু আমার সামনে তোমর পাশের জঙ্গল থেকে গং জাদিল, রে۰চিম গাছের গোড়ার রস, আগরু, দং ক্রেং বলরাসিন, বলচা۰পাত, বলগিন্দে-এসব এনে পোড়া দিয়ে রাখো। এসবের আপ্যায়িত হয়ে আমি রাত কাটিয়ে দেবো।’
আমার আগমনের চিহ্ন দেখতে পাবে বাঁতাবী লেবুর ফুলে, আমের ফুলে, প্রকৃতির জীবন্ত সমারোহে। তখনো তোমরা আমার আশীর্বাদ পাবে। তোমরা যাবতীয় খাদ্য-শস্য ও ফল-মূল সব পাবে। মনের সুখে পানাহার করতে পারবে। আর যখন তোমরা ঐসব আশীর্বাদ পাবে, তখন এই যে ঋতুতে এই যে সময়ে আমি তোমাদের বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণ করলাম, আপ্যায়িত হলামÑএমন সময়েই আমাকে ডাকবে, আতিথ্যদ দান করবে। এখন যেভাবে আমাকে ধূপ-নৈবেদো আপ্যায়িত করেছ তদ্রুপ তোমাদের ঘরের মালজুরীতে আমাকে ধূপ নিয়ে আপ্যায়িত করবে। তা করলে তোমাদের মঙ্গল হবে অভাব-অনটন থাকবে না। সুস্থ দেহ-মন নিয়ে থাকতে পারবে, আনন্দ-আহলাদ করতে পারবে।
আয়ে মেসালি সিংসালি তৎমারির বাড়িতে মিসি চিপিনপা-সালজং না’দাংপা আতিথ্য গ্রহণ, রাত্রিযাপন, আদর-আপ্যায়ন, আশীর্বাদ এবং প্রতি বছর তাঁর পুন্আঃগমন ও আশীর্বাদের প্রতিশ্রুতি, তাঁর সম্মানার্থে ওয়ানগালার নিদের্শ দান-পাড়া-প্রতিবেশীরাও শুনে জানতে পারলো। তাদের অবস্থার পরিবর্তন দেখেও লোকদের বিশ্বাস হলো। তাই পরের বছর ফিরে এলে, সঠিক ঋতু উপস্থিত হলে গ্রামের লোক সবাই মিলে চিপিনপা-সালজং না’দাংপার নিদের্শ অনুসারে দিন তারিখ নির্ধারণ করে ঘরের মালজুরীতে Trumalo Changsimalo, Nokjangchio warimo, অর্থাৎ ঘরের মাঝখানে তাঁরই স্মরণার্থে-নতুন খাদ্যশষ্য ও ফলমূল দিয়ে ভক্ষ-নৈবেদ্য, নতুন অনুষ্ঠান করলো। কালক্রমে তা অন্যান্য অঞ্চলের গারোদের দ্বারা গৃহিত ও পালিত হলো। আর এভাবে দূর অতীত থেকে গারোদের বার্ষিক উৎসব ওয়ানগালা গৌরবময় মহিমামণ্ডিত ঐতিহ্যের ধ্বজা তুলে ধরে চলতে চলতে বর্তমান অবস্থায় এসে পৌঁছালো।
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
-
রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর উৎসব ওয়ানগালা
: রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও...
-
আজ লেখক ও চিন্তক আলবার্ট মানকিন-এর স্মরণসভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান
: মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসী নেতা, চিন্তাবিদ, লেখক, সমাজকর্মী, এনজিও কর্মী আলবাট...
-
গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার
: গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার আদি সাংসারেক গারো জাতিগোষ্ঠীর...
-
১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ...
-
রে রে : হায়রে আমার কাঞ্জিয়া ।। নীলু রুরাম
: সমর সাংমার রেরে নিয়েই শুরু করি তবে একটু আলাদা। আমাদের...
-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপদ ব্যবহার ।। জাডিল মৃ
: এক. সময় স্রোতের সাথে আবাহমান ছুটে চলা প্রযুক্তির উন্নতি, মানব...
‘রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর উৎসব ওয়ানগালা’
: রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও......বিস্তারিত
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত