Thokbirim | logo

২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১০ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

লেখার মান ঠিক রাখার জন্য যত্নের প্রয়োজন।। সুমনা চিসিম

প্রকাশিত : জানুয়ারি ২২, ২০২০, ১২:১৮

লেখার মান ঠিক রাখার জন্য যত্নের প্রয়োজন।। সুমনা চিসিম

গারো সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট লেখক সুমনা চিসিম। তিনি লিখে চলেছেন দীর্ঘদিন ধরে। বেশ কয়েকটি বইও প্রকাশ হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বই হচ্ছে- ছোটদের গারো লোককাহিনি, ১৯৭১ স্মৃতিতে  গারো শরণার্থী, গারো জাতির ব্যবহৃত বনজ ঔষধি। লেখকের সাথে বইমেলা এবং লেখালেখি নিয়ে কথা হয়েছে থকবিরিম সম্পাদকের সাথে। সেই আলাপের বিশেষ অংশ পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো।

বইমেলাতে আপনার কী কী বই আসছে? কোন প্রকাশনী থেকে? আগের বইমেলাতে যে বই এসেছে দেলং তার পাঠক সাড়া কেমন?

– এবারের বইমেলাতে আমি আশা করছি তিনটি বই আসছে। সেটা হলো শিশুদের জন্য ‘গারো লোককাহিনী’, ‘৭১-এ গারো শরণার্থী’ ও ‘সাংমা অন আ হুইলচেয়ার’ নামে চিবল সাংমার বায়োগ্রাফি। এটা থকবিরিম প্রকাশনী থেকে হচ্ছে।
– গতবারের বইমেলাতে ‘দেলং’ লোককাহিনি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছিল। তাই আমি মনে করি পাঠক সাড়া দিয়েছে বলেই বেশি বিক্রি হয়েছে। অনেক পাঠক আছেন যারা লোককাহিনি পড়তে চাই–। আমি চেষ্টা করেছিলাম অনুবাদ করতে। সার্থক হয়েছে বলে মনে হয় আমার।

আপনার লেখালেখির শুরুর কাহিনি কীভাবে? মানে লিখতে আসা কীভাবে?
– আসলে আমি কলেজ জীবন থেকেই লেখালেখি করতাম। তবে খুব গোছানো ছিল না। টুকটাক লিখতাম। কোন বিশেষ সংখ্যায় ছাপা হত। যেমন বড়দিন সংখ্যা বলতে পারি। পরবর্তীতে ওয়ানগালা সংখ্যাতেও লিখতাম। তাছাড়া দৈনিক পত্রিকায় লিখতাম। এভাবে শুরু হয়েছিল। তারপর তো কবি মিঠুন রাকসামের অনুপ্রেরণায় বেশি লেখালেখি করেছি। সে আমার লেখার কাজটাকে অনেকখানি এগিয়ে নিয়ে গেছে। না হলে সে রকমই রয়ে যেতাম।

আপনার সময়ে কারা লিখতো?
– আমার সময়ে অনেকে হয়তো লিখতেন। তবে খুব যোগাযোগ ছিল না। আমার সমসাময়িক বয়সের না হলেও সিনিয়র তাদের লেখা পড়তাম। প্রতিবেশী ম্যাগাজিন-এ ছাপা হত। তাছাড়া জানিরা ম্যাগাজিন-্এও লিখতেন অনেকে।

এখন তাঁরা আছে কি? মানে লিখছে কি?
-অনেকে এখনও লিখছেন। যেমন ক্লেমেন রিছিল, সুভাষ জেংচাম, মণীন্দ্র মারাক, জেমস জর্ণেশ চিরান, মৃগেন হাগিদক, কবি মতেন্দ্র মানখিন— নীলু রুরাম বা এরকম অনেকেই আছেন তাঁরা এখনও লিখছেন–।

আপনার পরে যারা লিখতে আসছে, লিখছে তাদের লেখা/ কবিতা সর্ম্পকে আপনার অভিমত কী? তাদের লেখার কবিতার মান বিষয়বস্তু নিয়ে যদি বলতেন…
– আমার পরে যারা লিখছে তাঁদের লেখার মান ভাল বলে আমি মনে করি। কেননা এ প্রজন্মের যারা লিখছে তাঁরা নানান বিষয় নিয়ে চিন্তা করছে ও প্রকাশ করছে । কবিতা যারা লিখছে তাঁরাও ভাল করছে। লেখার মান ঠিকঠাক রাখার জন্য যত্নের প্রয়োজন বলে মনে করি। কবিতা লেখার বিষয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানে কর্মশালা হয়, সেখানে অংশগ্রহণ করা দরকার। আসলে লিখতে লিখতে হয়ে যায়। না লিখলে মান উন্নত করা যায় না।

গারো সাহিত্যের তো একটা ইতিহাস আছে। হুট করে সাহিত্য তৈরি হয় না, এখন আপনার কাছে সেই ইতিহাসটা জানতে চাই। গারো কবিদের কবিতা লেখার ইতিহাস হতে পারে…
-গারো সাহিত্যের ইতিহাস বলতে গেলে বলা যায় অনেককিছুই—। আসলে আমরা প্রথম মিশনারীদের দ্বারা একাডেমিক শিক্ষা নেয় এবং খৃষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হয় সেই ১৮৬৩ সালে। সেই থেকে শুরু লেখার কাজ। সমগ্র গারো অর্থাৎ ভারতের মেঘালয়সহ বাংলাদেশ-এ বসবাসকারী সাহিত্য র্চ্চা শুরু করে। এর আগে মুখে মুখে সব হতো। মনেও রাখতো। পরবর্তীতে যারা একাডেমিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলেন তাঁরা শুরু করলেন লেখালেখি। যেমন Ramke W. Momin Gi  Ku∙bidik Bengali into Garo Ditionary এটা সম্ভতত ১৮৮৭-দিকে প্রকাশ হয়। আর Milton S. Sangma- লিখিত History of Garo Literature আমরা দেখতে পাই। এরকম অনেক আছে। গারো, ইংরেজী ও বাংলা ভাষায় লেখা শুরু করে। গারো লোককাহিনী ইংরেজী ও গারো ভাষায় লেখা হয়েছে। এভাবে আস্তে আস্তে এ পর্যন্ত এর র্চ্চা হচ্ছে, পরিধি বাড়ছে। এখন আমরা দেখি কত কবি সাহিত্যিক তাঁদের লেখাগুলি লিখছে ও প্রকাশ করছে। নিজের ভাষায় যেমন লিখছে তেমনি ভিন্ন ভিন্ন ভাষায়-ও লিখছে। ভবিষ্যতেও তাই হবে।

বর্তমানে আপনি কী লিখছেন? কী নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন বা ব্যস্ত আছেন?
-এখানে অর্থাৎ ইউএসএ- এ এসে কিছুটা অবসরে থেকেও টুকটাক লেখালেখি করছি। ‘টেক্সাসের ডাইরি’ সময়ে সময়ে লিখছি। পশ্চিমবঙ্গের ‘সংবাদ দধীচি’- তে আমার লেখা ‘৭১ স্মৃতিতে গারো শরর্ণাথী’ ছাপাও হচ্ছে ধারাবাহিক ভাবে। পরবর্তীতে ‘টেক্সাসের ডাইরি’ ছাপা হবে এই সংবাদ দধীচি-তেই। বরাবরের মতই লোককাহিনী অনুবাদ করছি। পাশাপাশি আমার বাবা’র বায়োগ্রাফি’র কাজে সময় দিচ্ছি। আরেকটি বড় কাজ হাতে নিব ভাবছি। Dr. Lulius L. R. Marak, M.A: PH.D.-’র লেখা  ‘Garo Customary Laws Traditions And Practices’ ’ অনুবাদের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। এতবড় কাজ করতে সবারই দোয়া প্রার্থনা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। এভাবেই সময় যাচ্ছে।

কবিতা বা প্রবন্ধ নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী
-আমি কবিতা পড়তে ভালবাসি। বর্তমানে যারা কবিতা লিখে পোস্ট করে, তাঁদের কবিতা পড়ি। সে ছোট হোক কি বড় হোক। পড়ি। তবে আমি নিজে কখনও কবিতা লিখতে চেষ্টাও করিনি। আমার দ্বারা কবিতা হয় না বা হবেও না। তবে যারা লিখে তাঁদেরকে বলবো তাঁরা যেন লিখে যায়। প্রবন্ধ লিখি। ভবিষ্যতেও লিখব এ আশা রাখি।

গারোদের ভাল সাহিত্য পত্র/ লিটল ম্যাগ সর্ম্পকে জানতে চাই
-আসলে আমি খুব বেশি পরিচিত নয়। আমাদের গারোদের তেমন ভাল সাহিত্য পত্র / লিটল ম্যাগ তেমন গড়ে উঠে নাই। অনলাইনভিক্তিক। অনেকে চেষ্টা করছে। যেমন থকবিরিম, বোরাং বা এরকম আরও অনেক— নাম মনে আসছে না। এসব সাহিত্য পত্র নিয়মিতও প্রকাশ হয় না। নিয়মিত যদি হতো অনেক সমৃদ্ধি লাভ করতো। পাঠক নিয়মিত লিটল ম্যাগাজিন চাই। তাই নিয়মিত প্রকাশ হলে বিশেষ করে পাঠকদের জন্য যেমন ভাল হতো, তেমনি সাহিত্য র্চ্চাও জোড়ালো হতো।

তরুণ লেখকদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
– তরুণরা ভাল করছে। লিখছে তাঁরা। নিজের ভাষায় লিখছে অনেকে। আমি তাঁদের অভিনন্দন জানাই। আরও ভাল করার জন্য বইপত্র বেশি বেশি পড়তে হবে। নিজেদের সাহিত্য বিষয়ে জ্ঞান রাখা জরুরি যেমন অন্যদের বিষয়েও জানা দরকার। জানতে হলে পড়তে হবে। আমি এ প্রজন্মের তরুণ কবি / লেখকদের জন্য শুভেচ্ছা জানাই ও আর্শীবাদ করি যেন তাঁরা সামনে এগিয়ে যেতে পারে, নিজের সাহিত্যকে তুলে ধরতে পারে।




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost