Thokbirim | logo

২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

বড় দিনের উপহার ।। সুমনা চিসিম

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৫, ২০১৯, ০১:২৭

বড় দিনের উপহার ।। সুমনা চিসিম

কারণ একটি বালক আমাদের জন্য জন্মিয়েছেন,
একটি পুত্র আমাদিগকে দত্ত হইয়াছে;
আর তাঁহারই স্কন্ধের উপরে কর্তৃত্বভার থাকিবে,
এবং তাঁহার নাম হইবে-‘আশ্চর্য্য মন্ত্রী,
বিত্রমশালী ঈশর, সনাতন পিতা, শান্তিরাজ’। (যিশাইয় ৯: ৬)

উপরোক্ত পবিত্র বাইবেল এই শিক্ষা-ই দেয় যে, ঈশ্বর সদাপ্রভূ তাঁর প্রিয়পাত্র যীশু খৃষ্টকে মানব জাতির জন্য উপহার দান করেছেন; যেন পৃথিবীর মানব জাতি একে অপরকে ভালবাসে ও সকলের প্রতি সহমর্মি হয়। কারণ একে অপরের প্রতি সহমর্মিতা ও ভালবাসার মাধ্যমেই পরিবারে ও আত্মায় শান্তি প্রবেশ করে। আমরা পবিত্র বাইবেল-এর লূক লিখিত সুসমাচার থেকেও এই শান্তির বার্তা স্বর্গদূতদের মাধ্যমে জানতে পারি। তাঁরা সমস্বরে গাইছেন:

‘উর্দ্ধলোকে ঈশ্বরের মহিমা,
পৃথিবীতে (তাঁহার) প্রীতিপাত্র মনুষ্যদের মধ্যে শান্তি’(লূক ২: ১৪)।

যিশু খৃষ্ট-ই শান্তির রাজা এবং তাঁর দ্বারা মনুষ্যদের মধ্যে প্রীতি ভালবাসা গড়ে উঠবে। তাই মানব জাতির জন্য ঈশ্বর সদাপ্রভুর এই মহৎ ও অতুলনীয় উপহার বড়ই আনন্দের।

বর্তমান বিশ্বের সকল দেশের খৃষ্টান সম্প্রদায়ও বড় ধর্মীয় উৎসব এই বড়দিনে বিভিন্ন উপহার সামগ্রী একে অপরকে দিয়ে আনন্দ উৎসব করে। উপহার দেওয়ার এই রেওয়াজ আমরা পবিত্র বাইবেল থেকে (পূর্ব দেশের তিন পন্ডিতগণের উপহার দেওয়ার কথা) আমরা পায়: ‘পরে তাঁহারা গৃহমধ্যে গিয়া শিশুটীকে তাঁহার মাতা মরিয়মের সহিত দেখিতে পাইলেন, ও ভূমিষ্ঠ হইয়া তাঁহাকে প্রণাম করিলেন, এবং আপনাদের ধনকোষ খুলিয়া তাঁহাকে স্বর্ণ, কুন্দুরু ও গন্ধরস উপহার দিলেন’ (মথি ২:১১)।

ঐতিহাসিকগণ বলেন, এই উপহার দেওয়ার রীতি প্রচলন হয়েছিল যিশু খৃষ্টের জন্মের চার হাজার বছর আগে থেকেই মেসোপোটেমিয়াতে। মেসোপোটেমিয়ানদের বিশ্বাস ছিল যে, তাঁদের দেবতা দগধৎফঁশ’ বিবাদসৃষ্টিকারী মন্দ আত্মার সাথে প্রতি শীতকালে যুদ্ধ করে এই সব বিবাদসৃষ্টিকারী মন্দ আত্মাদের বধ করেন। তাই শীতকাল আসার সময় হলে-ই দেশের রাজা বিবাদসৃষ্টিকারী হিসেবে অভিযুক্তকে ধরে নিয়ে আসতেন এবং রাজার পোষাক পরিয়ে একদিনের রাজা সাজাতেন। পরবর্তীতে নববর্ষের উৎসবে বিবাদসৃষ্টিকারী হিসেবে অভিয্ক্তুকে মেরে ফেলা হতো। নববর্ষের উৎসব হিসেবে তারা উৎসবটি পালন করতেন এবং নতুন বছরকে স্মরণে রাখার জন্য একে অপরকে উপহার দান করতেন। আর তাদের বিশ্বাস ছিল যে, বিবাদসৃষ্টিকারী মন্দ লোককে মেরে ফেলার এই সাফল্য দেবতা মারদুকের-ই উপহার। বলা হয়ে থাকে যে, সেই থেকেই বড়দিনে উপহার দেওয়ার রীতি প্রচলন হয়।

তাছাড়া সান্তা ক্লস-এর ইতিহাস থেকে জানি যে, দেশের সরকার দ্বারা আরোপিত শাস্তি হিসাবে সান্তা- ক্লসকে বড়দিনে শিশুদের জন্য ঘরে ঘরে উপহার দিয়ে বেড়াতে হতো। কেননা তিনি নাক দিয়ে ড্রাগ নিতেন, আর অতিরিক্ত ধুমপান করতেন। শুধু তাই নয় তিনি বিষাক্ত মদও তৈরী করতেন। এই সব অপরাধে সরকার তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। কিন্তু সরকার তাঁকে একটি শর্ত আরোপ করে যে, যদি সে তাঁর জন্মদিনে নিজের টাকায় শিশুদের জন্য উপহার দিতে রাজী হয়, তাহলে তাঁকে যাবজ্জীবন কারা ভোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। সান্তা ক্লস নিজের টাকায় শিশুদের জন্য উপহার দেওয়ার শর্ত বেছে নেন। তিনি মানুষ হিসেবে খুব চালকচতুর ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি একটি এতিমখানার ৯৫ জন শিশু চুরি করেন। আর এই শিশুদের দ্বারা জোর করে বিনামূল্যে খেলনা তৈরী করাতেন। এতে তাঁর উপহার কিনতে খরচ হতো না। শিশুদের বয়স যখন ১০ বছর, তখন তিনি শিশুদেরকে ইঁদুরের বিষ খাওয়ায়ে তাদের শারীরিক বৃদ্ধি রোধ করতেন। সরকারের চাপে তিনি নিজের জন্মদিনে শিশুদেরকে উপহার দিয়ে বেড়াতেন। সেই থেকে বড়দিনে সান্তা ক্লসের মাধ্যমে উপহার দেওয়ার রীতি প্রচলন হয়।

 


বড়দিনে উপহার দেওয়ার এই রীতি রেওয়াজ আজকের সকল খৃষ্ট অনুসারীরাও করে থাকে। সকলে সকলের সাথে আনন্দ সহভাগিতা করে এই উপহার দেওয়া নেওয়ার মাধ্যমে। বড়দিন উৎসবের বড় শিক্ষনীয় ও আশ্চর্য্যরে বিষয়, যত আনন্দ ভাগাভাগি করা যায়, ততই আনন্দের মাত্রা বা পরিমাণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায় এবং বড় আকার ধারণ করে। আর বিপরীতে দুঃখ ভাগাভাগিতে দুঃখের পরিমাণ কমতে কমতে অবশিষ্ট আর থাকে না। সকলের জন্য বড়দিনের শুভেচ্ছা দিয়ে শেষ করছি। শুভ বড়দিন।




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost