Thokbirim | logo

২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

দায়িত্বশীল ও জবাবদিহিতামূলক নিউজপোর্টালের উপর মানুষ নির্ভর করবে।। নিখিল মানখিন

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২২, ২০১৯, ১৬:২০

দায়িত্বশীল ও জবাবদিহিতামূলক নিউজপোর্টালের উপর মানুষ নির্ভর করবে।। নিখিল মানখিন

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানাধীন জয়রামকুড়া গ্রামে জন্ম নেয়া নিখিল মানখিন  গারো সমাজ থেকে উঠে আসা জাতীয় পর্যায়ে প্রথম প্রফেশনাল গারো সাংবাদিক এবং বাংলাদেশের আদিবাসী সাংবাদিকদের মধ্যে তিনিই একমাত্র জাতীয় প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য।  তিনি সাংবাদিকতায় পাঁচবার জাতীয় মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। দৈনিক জনকণ্ঠে প্রবেশ করার আগে তিনি  দৈনিক প্রথম আলো’তে কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার এবং দৈনিক আজকের কাগজ পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। রাজধানীর নিউ ইস্কানস্থ দৈনিক জনকন্ঠ অফিসে বসে পারিবারিক, কর্মজীবন ও রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে তাঁর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন থকবিরিম নিউজ পোর্টালের সম্পাদক মিথুন রাকসাম।

থকবিরিম নিউজ ॥ কেমন আছেন দাদা ?

নিখিল মানখিন ॥ ভালো-মন্দ মিলিয়ে আছি।  বড়দিন কাছাকাছি হওয়ায় গ্রামে ছুটে যেতে মন ব্যাকুল হয়ে উঠছে।

থকবিরিম নিউজ ॥ এই পর্যন্ত বেড়ে উঠা নিয়ে স্মৃতিচারণ করুন ।

নিখিল মানখিন ॥ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানাধীন জয়রামকুড়া গ্রামে আমার জন্ম। পিতা পেলেন তজু ও মাতা সুনীলা মানখিন। দু’জনই মারা গেছেন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। দু’ভাই মারা গেছেন। আর্থিক অস্বচ্ছলতায় কেটেছে আমার ছেলেবেলা। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত জয়রামকুড়া সরকারি প্রাইমারি স্কুলে এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম  শ্রেণী কেটেছে  বিড়াইডাকুনী উচ্চ বিদ্যালয়ে। সপ্তাম শ্রেণী উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুরোহিত হওয়ার জন্য  টাঙ্গাইলের মধুপুর থানাধীন জলছত্র  সেন্ট পৌল’স সেমিনারীতে প্রবেশ করি। জলছত্র কর্পোস খ্রীষ্টি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে  সেন্ট যোসেফ সেমিনারীতে চলে যাই।  নটরডেম কলেজ, ঢাকা থেকে এইচএসসি পাস করার পর আমি সেমিনারী ত্যাগ করে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হই।

থকবিরিম নিউজ ॥ আপনার এই পর্যন্ত আসার পেছনে কাদের ভুমিকা উল্লেখ করার মত ?

নিখিল মানখিন ॥ পরিবারে লালিত পালিত হওয়ার ক্ষেত্রে মা-বাবা, ভাইবোনের ত্যাগ স্বীকার ও ভুমিকা উল্লেখযোগ্য।  সেমিনারীতে যাওয়ার পরই আমার সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হওয়ার সুযোগ ঘটে। সেমিনারীতে যাওয়ার পেছনে ফাদার পিটার রেমার ভুমিকা আজীবন মনে রাখব। আর সেমিনারীতে সন্তানের মত লালন পালন করেছেন সেন্ট  পৌল’স সেমিনারীর তৎকালীন রেক্টর , ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বর্তমান বিশপ পনেন পৌল কুবি। মূলত তিনিই আমাকে গড়ে তুলেছেন। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি অনেকটা গাইডহীন অবস্থায় বড় হয়েছি। ছাত্র রাজনীতি নিয়েই বেশি মেতেছিলাম। ক্যাম্পাসের গারো ভাইবোনদের সহযোগিতা পেয়েছি। কিন্তু ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগের নেতা ও কর্মীদের সঙ্গেই বেশি সময় কাটিয়েছি। তারাও আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন।  ছোটবেলা থেকে উচ্চ শিক্ষালাল পর্যন্ত ওয়র্ল্ড ভিশন, বাংলাদেশের সহযোগিতা পেয়েছি।

থকবিরিম নিউজ ॥ কীভাবে সাংবাদিকতা পেশায় আসা হয়েছে ?

নিখিল মানখিন ॥ আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বলতে হয়, ছাত্র হিসেবে আমি বরাবরই ভালো ছিলাম। বিড়ইডাকুনী উচ্চ বিদ্যালয়ের দুটি বছর ছাড়া ক্লাস ওয়ান থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত প্রথম স্থান অধিকার করে এসেছি। প্রথম বিভাগ পেয়ে এসএসসি ও এইচএসসি উত্তীর্ণ হয়েছি।  আমি সাধারণ মেধাতালিকায় সুযোগ পেয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হই। সাংবাদিকতা হওয়ার স্বপ্ন আমি দেখিনি। আমার সহপাঠী সাংবাদিকদের উৎসাহ ও সহযোগিতা পেয়ে এই পেশায় প্রবেশ করি। কলামিস্ট ও লেখক সঞ্জীব দ্রং এর সহযোগিতায় আমি প্রথমে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার হিসাবে কাজ করার সুযোগ পাই। সেখানে কাজ করার দেড় বছর পর  দৈনিক আজকের কাগজ পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসাবে যোগদান করি। সেখানে প্রায় এক বছর কাজ করার পর ২০০৬ সালের পহেলা জুন দৈনিক জনকণ্ঠে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে নিয়োগ পাই। এখন পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানেই আছি সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার হিসাবে। স্বপ্ন না দেখলেও এখন এই পেশাটা অনেকটা আত্মার আত্মীয় হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত সৃজনশীল, কাজ করার স্বাধীনতা, তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ গ্রহণ , রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা – সাংবাদিকতা পেশার এই ক’টা গুণ আমাকে বেশ মোহিত করেছে।  আমার জীবনের বড় অংশ জাতীয় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে আছে। আর এই পেশা যেন রাজনৈতিক পরিম-লেরই সদস্য। সব মিলিয়ে আমার চিন্তা-চেতনার সঙ্গে সাংবাদিকতা পেশার বৈশিষ্টসমূহ যেন মিলে একাকার হয়ে গেছে।

থকবিরিম নিউজ ॥ আপনি কীভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লেন ?

নিখিল মানখিন ॥ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে আমি কোনো ছাত্র সংগঠনে সম্পৃক্ত ছিলাম না। সুশৃঙ্খল ও নিয়মানুবর্তি সেমিনারী জীবন থেকে বেরিয়ে বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে অনেকটা স্বাধীনচেতা হয়ে গিয়েছিলাম। বিশ^বিদ্যালয় জীবন শুরুর  কিছু দিনের মধ্যেই  ছাত্র সংগঠনে জড়িয়ে পড়ি।  প্রথমে বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠনের(বাগাছাস), ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। তারপর একে একে বিভিন্ন সংগঠনে জড়িয়ে সম্পৃক্ত হই। জাতীয় ছাত্র রাজনীতির অংশ হিসেবে প্রথম দফায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের  এর সহ সম্পাদক এবং দ্বিতীয় দফায় সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। একই সঙ্গে বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন, বাগাছাস কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছি। আমিই প্রথম একাধারে বাগাছাসের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ লাভ করি। বাগাছাসের হয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলাধীন অসংখ্য মান্দি এলাকা ঘুরে নানা কর্মসূচী পালন করেছি। আর যেদিন বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করতাম সকালের নাস্তা শেষ করেই ‘ জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগান দিতে দিতে ছাত্রলীগের মিছিলে অংশগ্রহণ করে  মধুর কেন্টিনে ছুটে যেতাম। এভাবে প্রত্যাশিত হারের তুলনায় ক্লাসের উপস্থিতি অত্যন্ত কম থাকায় আমাকে কয়েক বছর পিছিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। ক্যাম্পাসের রাজনীতির পরতে পরতে ছিল আমাদের বিচরণ। যাদের নেতৃত্বে আমরা ছাত্রলীগ করেছি, তাদের অনেকেই এখন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদ ধারণ করেছেন। আমার ছাত্রলীগ বন্ধুদের অনেকেই কোনো না কোনোভাবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে আছেন। সাংবাদিকতা পেশায় এসেও তাদের সঙ্গে আমার বিচরণ অব্যাহত রয়েছে। সাংবাদিকতা ও রাজনীতির মধ্যে বিরাজ করে গভীর যোগসূত্র । আমিও সাংবাদিকতার পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচীগুলোতে অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখি। এভাবে আমার রাজনীতিতে প্রবেশ ঘটে। আর প্রয়াত সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এ্যাড. প্রমোদ মানকিন এর আশীর্বাদ পেয়ে আমি আওয়ামী যুবলীগ, ময়মনসিংহ জেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্যপদ লাভ করি। ধোবাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান, বন্ধু ডেভিড রানা চিসিম ও যুবলীগ, ধোবাউড়া থানা শাখার  সদস্য  সৌরিন আরেং সেং এর ভুমিকাও বেশ উল্লেখযোগ্য। তবে আমার বাগাছাসের নেতৃত্বে আসার পেছনে অগ্রণী ভুমিকা রেখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন তুখোড়  গারো ছাত্রনেতা অধ্যাপক অঞ্জন ¤্রং। তাঁর বলিষ্ঠ সাহসী নেতৃত্ব আমাকে সব সময় আকৃষ্ট করে।

ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ছাড়াও আমি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত  আছি।  বর্তমানে আমি বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশন, কেন্দ্রীয়  কমিটির সহ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক. বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান যুব ঐক্য পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশন, ধোবাউড়া থানা শাখা, ময়মনসিংহ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমি  জাতীয়  প্রেসক্লাব,  ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের স্থায়ী সদস্য লাভ করেছি। এর আগে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলাম। ছাত্রলীগ থেকে যুবলীগে আসা পর্যন্ত আমার প্রায় ২০ বছরের ছাত্র ও যুব রাজনীতির সরাসরি সম্পৃক্ততা ও  অভিজ্ঞতা রয়েছে।

থকবিরিম নিউজ ॥ এই সেক্টরের প্রতি  গারো ছেলে-মেয়েদের কেমন আগ্রহ লক্ষ্য করেন ?

নিখিল মানখিন ॥ বেশ আগ্রহ লক্ষ্য করি। তবে  দেশের বর্তমান সাংবাদিকতা সেক্টরের সার্বিক অবস্থা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং ও প্রতিকূল হওয়ায় অনেকে স্থায়ীভাবে প্রবেশ করতে পারছে না।

থকবিরিম ॥ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে বের হলেও আপনার আগে কেন প্রফেশনাল গারো সাংবাদিক বের হয়নি ?

নিখিল মানখিন ॥ পেশা নির্বাচনের বিষয়টি ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছাসহ নানা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। তবে যতদূর জানি, আমার আগে উত্তীর্ণ হওয়া কয়েকজন বড় ভাই-বোন জাতীয় পত্রিকায় স্বল্প সময়ের জন্য কাজ করেছিলেন। কিন্তু প্রফেশনাল সাংবাদিক হওয়ার আগেই তাঁরা অন্য পেশায় চলে যান।

থকবিরিম নিউজ ॥ রাজনীতিতে গারোদের আসা কতটা জরুরি ? জাতীয় রাজনীতিতে তাদের কেমন অবস্থান ?

নিখিল মানখিন ॥ রাজনীতিতে গারোদের অংশগ্রহণ বাড়ানো প্রয়োজন এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাজনৈতিকভাবে আরও সচেতন হওয়া দরকার। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট তাই বলে। যেকোন উন্নয়ন কর্মকা-ের পরতে পরতে জাতীয় রাজনীতির ছোঁয়া রয়েছে।  সকলকেই জাতীয় রাজনীতিতে ঢুকতে হবে তা মনে করি না।  প্রতিটি গারো গ্রামের কয়েকজনের কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত থাকা দরকার। তবে জাতীয় রাজনীতিতে বিশেষ করে থানা পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পদে গারোদের অংশগ্রহণ আগের তুলনায় বেড়েছে। প্রয়াত সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এ্যাড. প্রমোদ মানকিন, এমপি হলেন আমাদের রাজনৈতিক পথপ্রদর্শক ও অবিসংবাদিত নেতা। জাতীয় পর্যায়ের নেতা ছিলেন তিনি। তাঁর মাধ্যমেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গারো জাতির পরিচিতি ঘটে। বর্তমানে তাঁরই সুযোগ্যপত্র জুয়েল আরেং, এমপি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়াবাসীর সেবা করে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, তিনি  জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয়  সম্মেলনে সরকারি দলের হয়ে অংশগ্রহণ করে  প্রশংসা কুড়িয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গারো জাতির পরিচিতি ঘটিয়ে চলেছেন। গারো সম্প্রদায় থেকে উঠা আসা রাজনীতির আরেক নক্ষত্র হলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সদস্য উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং । জাতীয় রাজনীততে তাঁর অংশগ্রহণ ও ভুমিকাও বেশ দৃশ্যমান।  ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা চেয়াম্যান ডেভিড রানা চিসিমের নামও বেশ আলোচিত হচ্ছে। তিনি ধোবাউড়া থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। সম্প্রতি তিনি ময়মনসিংহ জেলার সেরা উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে ভূষিত হয়েছেন। উপজেলা পর্যায়ের থানা আওয়ামী লীগের কমিটিতে অনেক গারো নেতানেত্রী অন্তর্ভূক্ত আছেন।  এক্ষেত্রে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক রবেতা ¤্রং , ধোবাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডুওয়ার্ড নাফাক , মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এবং মধুপুর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পিউ  ফিলোমিনা ¤্রং সহ অনেকেই আছেন।

স্ত্রী-সন্তানদের সাথে সাংবাদিক নিখিল মানখিন

রাজনীতিতে আসার জরুরি হওয়ার বিষয়ে আমি প্রয়াত সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এ্যাড. প্রমোদ মানকিন, এমপি, জুয়েল আরেং , এমপি ও উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং এর দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান ভুমিকার বিষয়টি তুলে ধরতে চাই।  দৃশ্যমান ভুমিকা ও কার্যকলাপের পাশাপাশি অদৃশ্য অবস্থাতেও  তাঁরা আমাদের জান-মালের নিরাপত্তা  দিয়ে থাকেন । রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলেই আমরা তাদের সেই অদৃশ্যমান ভুমিকাসমূহ বেশি উপলব্ধি করতে পারি।  তাঁদের দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান অবস্থানের কারণে আমরা অজান্তেই নিজ নিজ এলাকায় নানাভাবে উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি বেশি মাত্রায় নিরাপত্তাবোধ অনুভব করে থাকি।

থকবিরিম নিউজ ॥ পরিবার ও সমাজে সেবামূলক কাজ করতে কী রাজনীতি করতেই হবে ?

নিখিল মানখিন ॥ সরাসরি রাজনীতি করতে হবে, এমন কথা নয়। তবে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে চোখ-কান খোলা রেখে রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়মিত  যোগাযোগ রাখা  উচিত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পরিবার ও সমাজের বড় বড় সমম্যার সমাধান রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপ ছাড়া সুসম্পন্ন হয় না। সরাসরি রাজনীতি না করেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রেখে চলেছেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক, কলামিস্ট ও লেখক  সঞ্জীব দ্রং । তিনি রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিত্ব এবং সাংগঠনিক। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাঁর নেটওয়ার্কিং রয়েছে। তাই খুব সহজেই  তিনি একজন রাজনৈতিক নেতার মত সমাজে ভুমিকা রাখতে পারছেন। এভাবে রাজনৈতিক পদে না থেকেও রাজনৈতিক সচেতন হয়ে এবং রাজনৈতিক নেটওয়ার্কিং বজায় রেখে অনেকে  গারো সমাজে উল্লেখযোগ্য  ভুমিকা রেখে চলেছেন। এমন আরও কয়েকজন গারো নেতার নাম উল্লেখ না করলেই নয়। তাঁরা হলেন  বাগাছাসের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক অঞ্জন ¤্রং , ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের সাবেক ভিপি ও বাগাছাসের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি বিলিয়ম অনিষীম সাংমা। প্রকাশ্যে রাজনৈতিক মাঠে না থাকলেও গারো সমাজে তাঁদের অব্যাহত  অবদান অস্বীকার্য। এক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা এতো বিপুল  যে, নাম উল্লেখ করে শেষ করতে পারব না।

থকবিরিমি নিউজ ॥ রাজনীতি নিয়ে আপনার কর্মপরিকল্পনা কী ?

নিখিল মানখিন ॥ জাতির কল্যাণেই আমি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকতে চাই। দলীয় কর্মপরিকল্পনা যথাযথভাবে পালনের পাশাপাশি গারো সম্প্রদায় থেকে যারা সম্মুখভাবে রাজনৈতিক মাঠে রয়েছেন, আমি তাদের সহযোগি হয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে চাই। আর সুযোগ পেলে শোষণ ও নির্যাতনকারীদের রুখে দিয়ে গারো সম্প্রদায়ের অসহায় সদস্যদের রক্ষা করতে  চাই। কিন্তু জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইচ্ছে ও পরিকল্পনা আমার নেই।

থকবিরিম নিউজ ॥ এই সময়ে গারোদের নিউজপোর্টাল কর্তটা জরুরি ?  গারো নিউজপোর্টালগুলোর ভবিষ্যৎ  কেমন  দেখছেন ?

নিখিল মানখিন ॥ ডিজিটাল যুগে নিউপোর্টালের প্রয়োজনীয়তা অনেকগুণ বেড়ে গেছে। আগামী কয়েক যুগ পর বিশে^র সংবাদ বা তথ্য প্রকাশ এবং তথ্য পাওয়ার   যেসব সোস্যাল মিডিয়ার দখলে চলে যাবে, তার  মধ্যে নিউপোর্টাল অন্যতম।  যেসব গারো নিউজপোর্টাল বের হতে দেখি, সেগুলোর অধিকাংশই অনিয়মিত এবং মানম্মত নয়। অনেকগুলোর নিউজ লেখার কাঠামো বা স্টাইল সম্পর্কে ধারণা নেই। তবে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে থকবিরিম নিউজ পোর্টাল গারো তথা আদিবাসী সমাজে বেশ সাড়া ফেলেছে, গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। নিয়মিত নিউজপোর্টাল বলতে আমি থকবিরিম নিউজপোর্টালকেই দেখছি। মান বজায় রেখে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে গারো নিউজপোর্টালগুলোর সুন্দর ভবিষ্যৎ রয়েছে। কারণ, এমন সময় আসছে যখন সংবাদের জন্য মানুষ দায়িত্বশীল ও জবাবদিহিতামূলক নিউজপোর্টালের উপর নির্ভর করবে। ফেসবুকসহ অন্যান্য সোস্যাল মিডিয়ার তথ্যের উপর পুরোপুরি নির্ভর করা যায় না। এখানে জবাবদিহিতার জায়গাটা একেবারে কম। থকবিরিম নিউজপোর্টালের মাধ্যমে আমরা গারো তথা আদিবাসী সমাজের খবরাখবর যথা সময়ে পেয়ে থাকি। আর পাঠক সমাজ এটাই কামনা করে।

থকবিরিম নিউজ ॥ আপনার বর্তমান পারিবারিক জীবন সম্পর্কে কিছু বলুন।

নিখিল মানখিন ॥ ধোবাউড়া ধানাথীন বণিক্যপাড়া গ্রামের তির্ময়ী বনোয়ারীর (কৃপা) সঙ্গে আমার দাম্পত্যজীবন। আমাদের দু’মেয়ে মাটি বনোয়ারী(১৩) ও কৃষ্টি বনোয়ারী(৭)।

থকবিরিম নিউজ ॥ সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

নিখিল মানখিন ॥ সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য আপনাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনাদের থকবিরিম নিউজপোর্টালের পথচলা সুগম ও স্বার্থক হোক। আপনাদের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করি।




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost