Thokbirim | logo

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ওয়ানগালা ।। বিভা সাংমা

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ০৫, ২০১৯, ১০:০৭

ওয়ানগালা ।। বিভা সাংমা

সৃষ্টির পর মিসি সালজং অগণিত অনুচর দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে পৃথিবী পরিদর্শনে এলেন- তখনো মাটি শক্ত অবস্থায় পরিণত হয়নি। নদী নালার প্রবাহ না থাকায় জল জমে মাটিকে আরও নরম তুলতুলে করে তুলেছিল। এই অবস্থা দুর করার জন্য তিনি নদী-নালার সৃষ্টি করলেন, পানি গড়িয়ে গিয়ে সমুদ্রে পড়ল। পাহাড় পর্বতের উপরে কঠিন পাথর ও বন জঙ্গল স্থাপন করায় পৃথিবী মনোরম ও বসবাসের যোগ্য হয়ে উঠল। সব শেষে তিনি বামিন রা’ছা সজন গিত্তেলকে আশীর্বাদ করলেন।

একদিন মিসি ছিফিনফা সালজং না’দাংফার বামিন রা’ছা সজন গিত্তেলের কথা মনে হলো

-‘ভাই এর সাথে দেখা করে আসি” এই বলে ভাল মন্দ খবর নেবার তিনি সজন গিত্তেলের বাড়িতে এসে উপস্থিত হলেন। সেই সময়ে বামিন রা’ছা খাদ্যাদভাবে মুমূর্ষূ অবস্থায় দিন যাপন করছিল। তিনি তার স্ত্রীকে বলেন:

-তোমার স্বামীকে গিয়ে বল মিসি ছিফিনফা তার সাথে দেখা করতে চায়

বামিন রা’ছার স্ত্রী স্বামীকে খবর দিলে সে বলল:

-আমি খাদ্যাভাবে কষ্ট পাচ্ছি, আমি পেট ভরে খেতে চাই।

স্ত্রী জিজ্ঞাসা করল:

-অতিথিকে কি দিয়ে আপ্যায়ন করব?

বিরক্ত সজন গিত্তেল জবাব দিল:

-একটা পাত্রে কিছু খুটে পুড়িয়ে দাও, সে তার ঘ্রাণ নিক।

ফিরে গিয়ে তার স্ত্রী মিসি ছিফিনফাকে সব কথা বলল। স্বামীর নির্দেশ মত খুঁটে পোড়ালে অপমাণিত ছিফিনফা অভিশাপ দিলেন:

-‘বামিন রা’ছা, তুমি এবং তোমার বংশধরকে পুরুষানুক্রমে বুগা অর্থাৎ মৎস নারী ধরে নিয়ে যাবে।”

এদিকে ঘুরতে ঘুরতে মিসি সালজং বিধবা আইসেগ্রির বাড়িতে উপস্থিত হলেন। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বিধবা আইসেগ্রি অত্যন্ত দরিদ্রাবস্থায় দিন যাপন করছির। বাড়ি ঘর তৈরি করে দেবার কোন পুরুষ মানুষ না থাকায় শুক্লা কলা পাতার ছাউনি ও বুনো লতাপাতা দিয়ে বেড়া তৈরি করে কোন রকমের দিন কাটাচ্ছিল। অপরিচিত মিসি সালজংকে মা-মেয়ে কেউ-ই চিনতে পারল না।

মিসি সালজং আইসেগ্রিকে বললেন:

-আমি আজ তোমার মেহমান, তোমার বাড়িতে থাকব।

আইসেগ্রি অত্যন্ত লজ্জিত হয়ে বলল:

-আমি এক দু:খী বিধবা নারী, বাড়ি-ঘর কিছুই নাই। বুনো লতাপাতার তৈরির ঘর আপনার মত সম্মানজনক অতিথির থাকার যোগ্য নয়।

মিসি সালজং তার অন্তরের সরলতা দেখে খুশি হলেন।

-তোমার অবস্থা আমি জানি, তবু তোমার বাড়িতেই আজ থাকব। তুমি আমার সামনে ধুপ জ্বালিয়ে দিও, তাহালেই চলবে।

সেই বিধাবা মিসি সালজংএর সামনে ধুপ জ্বালালে তিনি খুশি হয়ে বললেন:

-সত্যি খুব সুন্দর, মন আনন্দে পূর্ণ হলো।

মিসি সালজং সেই দিন আইসেগ্রিকে ধান, কাউন, রাং ও অন্যান্য ধন-দৌলত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন।

-এক বৎসর পর আমি আবার আসব। তখন তোমার আনন্দ ফুর্তিতে খাওয়া-দাওয়া করবে। এখন যেমন করেছো তেমনি আমার সামনে ধুপ জ্বালাবে।

সেই দিন থেকে প্রতি বৎসর ফসল তোলার পর ধুপ জ্বালিয়ে পানাহার পূর্বক নৃত্যগীতের মাধ্যমে লোকেরা ‘‘ওয়ানগালা” উৎসব পালন করে আসছে।

কথক: থথিম সাংমা নেংমিন্জা।।রজেং, গারো হিলস




সম্পাদক : মিঠুন রাকসাম

উপদেষ্টা : মতেন্দ্র মানখিন, থিওফিল নকরেক

যোগাযোগ:  ১৯ মণিপুরিপাড়া, সংসদ এভিনিউ ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। 01787161281, 01575090829

thokbirim281@gmail.com

 

থকবিরিমে প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। Copyright 2020 © Thokbirim.com.

Design by Raytahost