একদা বহুপ্রাচীনকালে মাচ্ছাদুদের ছোট্ট একটা বসতি ছিলো। মাচ্ছাদু হলো অর্ধমানব ও অর্ধব্যাঘ্র জটাকেশী (mop-headed) নরখাদক গোত্র। মাচ্ছাদুদের এই বসতি ছিলো আচিকদেশে সিমসাং নদীর উচ্চ ঢালের তীরে দুর্ভেদ্য আদিম অরণ্যের মাঝখানে। তাদের মাঝে মাত্র ত্রিশ জন সদস্য ছিলো, যাদের সবারই স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে ছিলো। এই বাহ্যত মানুষেরা নিজেদেরকে ইচ্ছামত সম্পূর্ণ বাঘে রূপান্তরিত করতে পারতো। মাচ্ছাদুরা সাধারণত মানুষের রূপধারণ করতো এবং মানুষের মতোই পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করতো। এই উপায়ে মানুষকে ফাঁদে ফেলে খেয়ে ফেলতো।
মাচ্ছাদুদের গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে প্রায় একদিনের পথ অতিক্রম করলেই এক বড় আচিক গ্রাম। এ গ্রামে ছিলো আওয়াত নামে এক আচিক তরুণের বসবাস। মাঝে মাঝে মূল্যবান দ্রব্যাদি বিনিময়ের উদ্দেশ্যে মাচ্ছাদুরা নিজেদের বসত থেকে আচিক গ্রামে চলে আসতো। যখনই তাদের কেউ মাচ্ছাদু বলে ধরা পড়তো তখনই আচিকরা ধারালো মিল্লাম (দ্বিধার খড়্গ) দিয়ে তাদের মাথা কেটে ফেলতো। এই কারণে মাচ্ছাদুরা ছিলো নিষ্ঠুর, শঠ ও কঠিন। তারা ভীরু ও নির্বোধ ছিলো।
একদিন নির্ভীক আওয়াত সুমিষ্ট গন্ধযুক্ত মোনারেচ্চি বা সবরি কলায় এক বিশাল ঝুড়ি ভরলো। সেগুলো বয়ে মাচ্ছাদুদের কলোনিতে নিয়ে চললো। কিন্তু সেখানে পৌঁছে আওয়াত উদার হয়ে তার চারপাশে জড়ো হওয়া সব মাচ্ছাদুদের হাতে সুমিষ্ট কলা বিনামূল্যে বিতরণ করলো। মাচ্ছাদুরা সেই সব কলা খেয়ে খুব করে সেসবের মধুর স্বাদের আস্বাদ নিলো। আওয়াত নির্ভীকভাবে তাদের কলা পছন্দ হয়েছে কিনা জানতে চাইলো। অভদ্রজনোচিতভাবে সেই প্রশ্ন উপেক্ষা করে তার জন্য একটি কলা রেখে দিলোঃ
“যেগুলো নিয়ে এসেছো, এসব কোথায় পাওয়া যায়? আঙ্গুর গাছে নাকি অন্য কোন গাছে?” তারা উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো। সেসব এক বড় লম্বা গাছে জন্মায় বলে আওয়াত সঙ্গে সঙ্গে উত্তর জানালো। তারপর মাচ্ছাদুরা নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে বললোঃ
“লোকটাকে চলো গাছটা দেখাতে জোর করি। সেখান থেকে ফলটা পাওয়ার পর প্রথমে তাকেই খেয়ে ফেলবো।”
তাই, শীঘ্র মৃত্যুর মুখে তারা আওয়াতকে ঈপ্সিত গাছটি দেখানোর জন্য জোর করলো। কিন্তু তাদেরকে নিয়ে যাবার আগে দুঃসাহসিক তরুণ বললোঃ
“এখানে আসার আগে একদল ফন্দিবাজকে দেখে আসলাম। তারা কীসব কথাবার্তা বলছে সেসবই গোপনে শুনলাম। আমি শুনলাম – তারা তোমাদের কলোনিতে এসে তোমাদের সব টাকা-কড়ি, মূল্যবান রাং (Gongs), মূল্যবান গুটিকা ও কাপড় চুরি করে নিয়ে যাওয়ার নকশা করছে। আমি নিজে থেকেই সেই গাছ তোমাদের দেখাবো, যে গাছে এই অতীব সুমিষ্ট ফল ধরে। তোমাদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক সব পুরুষ লোক আমার সঙ্গে এসো। তোমাদের কলোনির কাছে গুহার গুপ্ত ভাণ্ডারে লুকিয়ে রাখো। দামী যা কিছু সব সরানোর পর যার যার স্ত্রী ও সন্তানদের বাড়ির ভিতর রেখে বাইরে থেকে দরজা আটকে দাও। চোরেরা তোমাদের কলোনিতে আসলে ঘরের ভিতর থেকে কণ্ঠস্বর শুনতে পাবে। মহাভয়েই তখন দৌড়ে পালাবে।”
আওয়াত যেভাবে মন্ত্রণা দিলো, সরল মাচ্ছাদুরা ঠিক সেই ভাবেই করলো। তাদের মূল্যবান সম্পত্তি সরিয়ে নিজেরই দেখানো এক গুহার গভীর গুপ্তভাণ্ডারে গচ্ছিত রাখার কাজে সে তাদেরকে সাগ্রহে সাহায্য করলো। পরে, নিজেদের স্ত্রী ও সন্তানদের নিরাপদে ঘরের ভিতর রেখে বাইরে থেকে আটকে দিলো।
প্রাপ্ত-বয়স্ক পুরুষ মাচ্ছাদুরা সহর্ষে স্বচ্ছন্দে পরমসুখে আওয়াতের পিছনে চললো, শীঘ্রই যে ফল তাদের হবে তার প্রত্যাশায়। তরুণ তাদেরকে এক দৈত্যাকৃতির শিমুল তুলা গাছের নীচে নিয়ে গেলো। যার পরিধি ছিলো পঞ্চাশ হাত। যার ডালপালাগুলি আধাপাকা তুলা বীজের ভারে ভারী ছিলো। আওয়াত তাদেরকে বললোঃ
“এখন গাছের কাছে মাটিতে একসাথে উবু হয়ে পড়ো। সবুর করো – তোমাদের জন্য আমার কুড়াল দিয়ে কেটে নীচে নামিয়ে দিচ্ছি।”
আওয়াত গাছটাকে এমনভাবেই কাটে যেনো তা গিয়ে তাদের সবার উপর পড়ে।
যখন গাছ হুমড়ি খেয়ে পড়ছিলো তখন সে সজোরে চিৎকার করে বললোঃ
“এখন উপরে গাছের দিকে চেয়ে দেখো। ফল পেতে তোমাদের হাত উপরের দিকে বাড়িয়ে দাও।”
তাই, সব মাচ্ছাদু ঘেঁষাঘেঁষি করে একসঙ্গে পতনোন্মুখ গাছের দিকে তাদের প্রসারিত হাত বাড়িয়ে দিলো। গাছটি ভীষণ শব্দে পড়ে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে সমবেত সব মাচ্ছাদুদের মেরে ফেললো। যার ফলে আওয়াত দ্রুত তাদের বসতবাড়িতে ফিরে তাদের ঘরবাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দিলো। যার যার সন্তান-সন্ততি সমেত সব স্ত্রী মাচ্ছাদু জীবন্ত পুড়ে মরলো। মাচ্ছাদুদের গোটা গ্রাম অচিরেই ভস্মে পরিণত হলো।
এরপর, আওয়াত সঙ্গে টাকা-কড়ি, দামী দামী রাং, মূল্যবান গুটিকা ও কাপড় নিয়ে তার নিজের গ্রামে ফিরে আসলো। যা সে এক বারেই বয়ে আনতে পারলো। নিজেকে করলো মাচ্ছাদুদের সমস্ত ধন-সম্পত্তির একচ্ছত্র অধিকারী। পরে, তার পছন্দমতো এক রূপবতী মেয়েকে বিয়ে করলো। অতীতে মাচ্ছাদুরা যে অঞ্চলে কর্তৃত্ব করতো, সেই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করলো। বছর কি বছর কেটে গেলে তার নিজের লোকেদের অনেকজন তার সঙ্গে বাস করতে চলে এলো।
আওয়াত নদীতীরে এক বড় গ্রাম গড়ে তুললো। গ্রামটির অবিসংবাদিত নকমা (বা, হেডম্যান) হিসেবে বিজ্ঞতার সঙ্গে শাসন করতে লাগলো। কালেক্রমে, আওয়াত আরও ধনী হতে থাকে, আরও প্রভাবশালী হতে থাকে। জীবদ্দশায়, সেই কলোনি ও চারপাশে তার সকল বিশ্বস্ত প্রজাদের অঞ্চলেই ন্যায়পরায়ণ অকৃত্রিম রাজা হিসেবে ছিলো তার জয়জয়কার।
সানোন সাংমা রংমুথু কর্তৃক কথিত
চাসাতগিরি গ্রামে, ডিস্ট্রিক্ট গারো হিলস
ছবি: সংগ্রহ, চালাং রিছিল
THE FOLK-TALES OF THE GAROS
Compiled by
DEWAN SING RONGMUTHU, B.A. (Hons.)
Published by the University of Gauhati in the Department of Publication
FIRST EDITION: AUGUST 1960
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
-
রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর উৎসব ওয়ানগালা
: রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও...
-
আজ লেখক ও চিন্তক আলবার্ট মানকিন-এর স্মরণসভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান
: মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসী নেতা, চিন্তাবিদ, লেখক, সমাজকর্মী, এনজিও কর্মী আলবাট...
-
গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার
: গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার আদি সাংসারেক গারো জাতিগোষ্ঠীর...
-
১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ...
-
রে রে : হায়রে আমার কাঞ্জিয়া ।। নীলু রুরাম
: সমর সাংমার রেরে নিয়েই শুরু করি তবে একটু আলাদা। আমাদের...
-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপদ ব্যবহার ।। জাডিল মৃ
: এক. সময় স্রোতের সাথে আবাহমান ছুটে চলা প্রযুক্তির উন্নতি, মানব...
‘রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর উৎসব ওয়ানগালা’
: রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও......বিস্তারিত
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত