খগেন্দ্র হাজং-এ অসুস্হ্যতা ধরা পড়ে এবছরের মার্চ মাসে। যখন তাঁর ছেলে বিশ্বজিৎ-এর কাছ থেকে তাঁর অসুস্থতার কারণ জানতে পারলাম তখন বড় স্তব্ধ হয়ে পড়লাম কিছুক্ষণের জন্য। অবিশ্বাস্য, তাঁর দু’টো কিডনীই নাকী অকেজো হয়ে পড়েছে। কিডনি দু’টো ৯০% এর ওপরে ক্ষতিগ্রস্ত। মনে মনে ভাবলাম, কেন আরো আগে রোগটি ধরা পড়ল না। অন্তত একটি কিডনী সবল থাকলে বা ৫০% অকেজো হলেও তো বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। এর আগে প্রায় একমাস যাবত স্থানীয় কলমাকান্দা উপজেলা হাসপাতাল, জয়রামকুড়া হাসপাতাল এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল-এ তিনি ভর্তি ছিলেন। রোগ ধরা পড়েনি। যখন সেসময় ফোনে খোঁজ নিতাম তিনি বলেছেন, খাবার খেতে পাড়ছেন না। কোন রুচি হয় না। তাঁর কিডনীর এতো বড় ধ্বংস তিনি তখন কিছু্ই টের পাননি। তিনি শুধু বলতেন আমার কিছুই হয়নি সবই ঠিক আছে। কতটা মনোবল থাকলে এমন বলা যায়! রোগ ধরার পর গত মার্চ মাসে যখন তাঁকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে যাই সেসময় তাঁকে অনেকটা দুর্বল দেখাচ্ছিল। কিন্তু মনোবল তখনো অনেক দৃঢ়। ঐদিন হাসপাতালে তাঁর ডায়ালাইসিস পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। ডাক্তাররা বলেছে, খাওয়া-দাওয়া করলে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পাড়বে, হাঁটাচলা করতে পারবে।
এর পরের মাস একটু সময় নিয়ে দীর্ঘক্ষণ তাঁর সাথে কথা হয় তাঁর ছোট ছেলে তুষার হাজং-এর মেসে, নাখাল পাড়ায়। তখন তিনি সেখানে থেকে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করে যাচ্ছিলেন। এ অসুস্থ্য থেকেও তিনি তাঁর গ্রামের অবৈধভাবে দখলে থাকা হাজংদের শ্মশান ও দেবোত্তর জমি উদ্ধারে লড়াই করে যাচ্ছেন এবং দখলমুক্ত করতে পেরেছেল বলে সাকসেস স্টোরি শোনালেন। আরো অনেক কথা। তিনি বললেন, দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন। সংঘঠনের কাজে আবার সময় দিবেন। আমার সামনেই মোবাইল ফোনে সংগঠনের বেশ ক’জনের সাথে কথা বললেন।
দু’সপ্তাহ আগে তিনি যখন শেষ যেদিন ময়মনসিংহে ডায়ালাইসিস করতে গিয়েছিলেন সেদিও কথা হলো তাঁর সাথে। তাঁর অসুস্থ্যতার আর কী খবর নেব! তিনিই জানতে আগ্রহী হয়ে পড়ছেন, সংগঠনের কী অবস্থা। সংগঠনের কার্যক্রম কী ইত্যাদি।
এ অসুস্থ্য অবস্থাতেও তিনি এলাকার প্রোগ্রামগুলোতে অংশ নিচ্ছেন। আদিবাসী দিবস উপলক্ষে ঢাকার অনুষ্ঠানগুলোর আপডেট জানতে চেয়েছেন আমার কাছে।
আমি বাংলাদেশ জাতীয় হাজং সংগঠনের হাজং ভাষা প্রকল্পের কর্মসূচির কথা তাকে জানিয়েছি। তাঁর সভাপতিত্ব সময়ে তাঁর উপস্থিতিতে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে আমরা আইএলও ও কাপেং ফাউন্ডেশনের আদিবাসী নেভিগেটর এর একটি এফজিডি দুর্গাপুরের গোপালপুর গ্রামে আয়োজন করি। সেখানে হাজং ভাষা নিয়ে কাজ করার অনেকের সাথে তাঁরও জোরালো সুপারিশ করি। সে কাজই আজ বাস্তবায়িত হতে চলেছে। কিন্তু তিনি আজ পড়ে আছেন বড় অসুস্থ্য হয়ে।
”চিকিৎসার কোন অবহেলা ছিলো না পরিবারের। পাড়ার বয়স্ক লোকজন তাঁকে প্রায়ই বলত, আমরাই বুড়া হয়ে গেলাম আর খগেন বাবু এখনো যুবকই আছেন। ও সবসময় ডাক্তারদের বলত আমার কোন রক্তচাপ নেই, অন্য কোন সমস্যা নেই। আমি আরো ৩০ বছর বেঁচে থাকতে চাই- এমনটাই কেঁদে কেঁদে বলছিলেন তাঁর স্ত্রী রমলা দেবী হাজং। এ যাবত ৭/৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে তাঁর চিকিৎসার পেছনে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিকিৎসার জন্য আবেদন করে গত দু’মাস আগে ৫০ হাজার টাকা হাতে পেয়েছে বলে জানিয়েছে তাঁর বড় ছেলে।
এখন তিনি গ্রামের বাড়ি থেকে ময়মনসিংহ শহরে গিয়ে ডায়ালাইসিস করে আসেন। তাই এবার দুর্গাপুরে সংগঠনের কাজে এসে তাঁকে আবারো দেখে আসার সুযোগটি মিস করতে চাইলাম না। চেষ্টা করেও তাঁকে ফোনে পেলাম না। এদিকে শুনলাম গতসপ্তাহ ধরে তাঁর অবস্থা খুবই খারাপ হয়েছে। বিছানা থেকে ওঠতে পারছেন না। খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো করতে পারছেন না। তাই ২৯ সেপ্টেম্বর ঝড়ের বিকেলে আমরা ক’জন বাংলাদেশ জাতীয় হাজং সংগঠন-এর সভাপতি আশীষ কুমার হাজং ও শ্রদ্ধেয় মতিলাল হাজংএর নেতৃত্বে তাঁকে দেখতে গেলাম। সাথে আরো ছিলেন, জাতীয় হাজং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পল্টন হাজং, সহ-সভাপতি হরিদাস হাজং, অর্থ-সম্পাদক সুজিপ্ত হাজং, সুবোধ হাজং, রসিত্র হাজং। তিনি অচেতন হয়ে শুয়ে আছেন বিছানায়। আদিবাসী অধিকার আদায়ের লড়াকু সৈনিক ও সংগঠন প্রিয় এ লোকটিকে আমরা এতো সহজে হারাতে চাই না। আমরা তাঁর আশু আরোগ্য কামনা করি। তিনি যেন সমাজের জন্য আরো অনেকদিন বেঁচে থাকেন।
সোহেল হাজং- লেখক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয় হাজং সংগঠন
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত
-
রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর উৎসব ওয়ানগালা
: রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও...
-
আজ লেখক ও চিন্তক আলবার্ট মানকিন-এর স্মরণসভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান
: মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসী নেতা, চিন্তাবিদ, লেখক, সমাজকর্মী, এনজিও কর্মী আলবাট...
-
গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার
: গুলশান বনানী ওয়ানগালা ২১ অক্টোবর শনিবার আদি সাংসারেক গারো জাতিগোষ্ঠীর...
-
১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ...
-
রে রে : হায়রে আমার কাঞ্জিয়া ।। নীলু রুরাম
: সমর সাংমার রেরে নিয়েই শুরু করি তবে একটু আলাদা। আমাদের...
-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপদ ব্যবহার ।। জাডিল মৃ
: এক. সময় স্রোতের সাথে আবাহমান ছুটে চলা প্রযুক্তির উন্নতি, মানব...
‘রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর উৎসব ওয়ানগালা’
: রাত পোহালেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে গারো জনগোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক ও......বিস্তারিত
‘১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থকবিরিম-এর যুগপূর্তি উৎসব অনুষ্ঠান’
: এক এক করে বার বছরে পদার্পণ করলো গারো সাহিত্যের পত্রিকা ......বিস্তারিত